আমি রুইসা খিয়াং,-
১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর বর্বরোচিত হামলা এখনো ভুলার নয় । চারিদিকে গোলাগুলির শব্দ । এলাকার সব মানুষ যে যেখানে পেরেছে পালিয়েছে । সেদিন সাপ্তাহিক বাজারের দিন ছিল । আমি আমার পরিবারের জন্য বাজার করার জন্য বাড়ী হতে রওনা হই । পথে দেখি অনেক পাক হানাদার বাহিনী বাঙ্গালীদের একসাথে কোমড়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে । আমাকে দেখে একজন পাকিস্তানী সৈন্য ডাকলেন । সেই সময় আমার হার্টের স্পন্দন যেন মাথার উপরে চড়ে গেল । সেই সৈন্য আমাকে বলল, বাঙ্গালীদের বাঁধা দড়ি ধরতে । আমি ভয়ে সেই দড়ি ধরলাম । এখন বলল, সকলকে দড়ি টেনে কর্ণফুলীর নদীর পাড়ে নামাতে । আমি তখন খুবই ভয় পেলাম । বুঝলাম এবার বুঝি আমার আর প্রাণে রক্ষে নেই । সকলে নদীর পাড়ে নামার পর আমাকে দড়ি খুবই শক্ত করে ধরতে বললেন । আমি দড়ি শক্ত করে ধরে রাখলাম । পরে সৈন্যরা একের পর এক নিরীহ বাঙ্গালীদের গুলি করল । সকলে একের পর এক নদীতে ঢুলে পরল । পরে সৈন্যটি আমাকে বলল, তুমি উঠে গিয়ে তারাতারি চলে যাও । আমি প্রাণে বেঁচে চলে আসলাম । সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালাম প্রাণে বেঁচে যাবার জন্য । পরে আমি চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালে সামনে আসলাম । হাসপাতালের সামনে একটি বিরাট গাব গাছ রয়েছে । সেখানে দেখলাম, মর্মান্তিক আর বিভৎস্য নির্যাতন । কিছু পাকিস্তানী সৈন্য বাঙ্গালীদের ধরে এনে গাব গাছের ডালে উল্টো দিকে ঝুলিয়ে রেখেছে । আর জলজ্যান্ত মানুষকে গাঁয়ের চামড়া ছুঁলে লবণ আর মরিচের গুড়া মাখিয়ে দিচ্ছে । আর মানুষগুলো যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে । এমন অমানবিক অকথ্য নির্যাতন স্বচক্ষে দেখেছি । সেই কালের স্বাক্ষী গাব গাছ হাসপাতালের সামনে আসলে এখনো দেখতে পাবেন । পরে ভয়ে পরিবারকে কর্ণফুলীর ওপাড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গেছি । যুদ্ধ চলাকালীন সময় পর্যন্ত আমি নিজের ঘরে ছিলাম । এই লোকটি মারা গেছেন ২ আগস্ট ২০১১ইং ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন