৬০ বছর পর চিকিৎসার বিল পরিশোধ
আনুমানিক ১৯৫৬-৫৯ইং সালে খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতাল চন্দ্রঘোনায় ১৮ বছরের যুবক প্রবাস মুৎসুদ্দী সাইকেল দূর্ঘটনায় ভর্তি হয়েছিলেন । তিনি সে সময় কোমড়ে আঘাত জনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন । বাবার নাম ছিল প্রয়াত সুরেশ মুৎসুদ্দী । তার বাবা একজন সামান্য বেতনভুক্ত শিক্ষক ছিলেন । তার পক্ষে সে সময় তার ছেলের চিকিৎসার বিল পরিশোধ করার মত স্বামর্থ ছিল না । সেই সময় ব্রিটিশ মিশনারী চিকিৎসক Dr.J.W.Bottoms প্রবাস মুৎসুদ্দীকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন । হত দরিদ্র পিতার পক্ষে ছেলের চিকিৎসার বিল পরিশোধ করার মত অবস্থা ছিল না । তাই সেই সময় তার বাবা Dr.J.W.Bottoms এর কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন, যদি কখনো সম্ভব হয় তাহলে সেই চিকিৎসার বিল পরিশোধ করবে । দু:খ, কষ্ট আর দারিদ্রতার কারণে হতভাগ্য তার পিতার পক্ষে ৯০ টাকা আর পরিশোধ করা সম্ভব হলো না । তার পিতাও অসময়ে হঠাৎ মারা গেলেন । পিতার সেই অঙ্গীকারের কারণে দীর্ঘ ৬০ বছর পর গত ১০ ডিসেম্বর ২০০৮ইং তারিখে হাসপাতালে এসে নিজের চিকিৎসার খরচের ৯০টাকা বকেয়া বিল পরিশোধ করে গেলেন । তিনি বললেন, আমি এই বিলের টাকা পরিশোধ করতে পেরে নিজেকে দেনা দায় হতে মুক্ত মনে করেছি । তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় রিফুজী হিসেবে ভারতে চলে গিয়েছিলেন । অভাব অনাটন তার জীবনে সব সময়ই লেগেই থাকত । তিনি ৭ম শ্রেণী পযর্ন্ত লেখাপড়া করেছেন । ভারতের পুন্নিচেরি শ্রী অরবিন্দু আশ্রমে রয়েছেন সু-দীর্ঘ ৩৭ বছর । বর্তমানে ভারতে স্থায়ীভাবে আছেন কিনা জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন আমি Residential Visa নিয়ে সেখানে রয়েছি । তিনি চট্রগ্রাম জেলার রাঙ্গুনীয়া থানার অর্ন্তগত নজরটিলা নিজ গ্রামে তার ভাইয়ের ছেলের কাছে মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসেন। প্রবাস মুৎসুদ্দীর বর্তমান বয়স ৮১ বছর । তিনি বলেন, আমি যে আশ্রমে রয়েছি, সেখানে চিরকুমার হয়ে থাকতে হয় । তাই আমি সারা জীবনই মানব কল্যাণের সেবাতেই জীবন অতিবাহিত করেছি । তবে আমার ইচ্ছা রয়েছে, আমি এদেশে একেবারে চলে আসবো । তিনি ১৯৬৫-৬৬ সালের দিকে কর্ণফুলী পেপার মিলেও ২ বছরের মত কাজ করেছেন । তিনি সে সময় মোজাইকের কাজ করতেন । ৮১ বছরের এই বৃদ্ধ এখনো শক্তি স্বামর্থ ও মনোবল নিয়ে অন্যের কোন রকম সাহায্য ছাড়াই চলাফেরা করতে সক্ষম। তিনি ৬০ বছর পর নিজের চিকিৎসার খরচের বকেয়া বিল ৯০ টাকা পরিশোধ করে আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তুললেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন