রবিবার, ১৩ মে, ২০১২

খিয়াংদের বর্তমান প্রেক্ষাপট

বর্তমান প্রেক্ষাপট: রাংগামাটি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার প্রাচীনতম আদিবাসী খিয়াংদের অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছেজুম চাষ নির্ভরশীল খিয়াংরা শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ অনুন্নত থাকায় অন্যান্য উপজাতিয়দের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছেপার্বত্য চটগ্রামে ১৩টি আদিবাসী জাতিসত্তার মধ্যে খিয়াংরা ক্ষুদ্রতম জনগোষ্ঠী শিক্ষার হার শূন্য থাকার কারণেও সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে এরা বঞ্চিতএদের আর্থ সামাজিক অ-উন্নয়ন ও ভূমি অধিগ্রহণের ফলে এরা ভুমিহীন অধিবাসীতে পরিণত হয়েছেঅন্যদিকে সরকারী বনায়ন কর্মসূচীর কারণে খিয়াংরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেবন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন কাপ্তাই পাল্পউড বাগান প্রকল্প বনায়নের জন্য ধনুছড়ি মৌজার ৩৯৫৯ একর জায়গা থেকে ৩৮৮৯ একর জায়গা ১৯৭৬ সালে অধিগ্রহণ করে এবং অবশিষ্ট ৭০ একর জমি ২০০ পরিবারের নিজস্ব জমি হিসাবে স্বীকৃত হয়এ বনায়ন কর্মসূচীর ফলে একমাত্র জীবিকার অবলম্বন জুমচাষ ও পশুপালনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং দিন দিন এরা ভূমিহীন উপজাতি হিসাবে পরিণত হচ্ছেবন জঙ্গলে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন রকম মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়েছে এবং বাঁচার তাগিদে অন্যস্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে

খিয়াংরা যাতে করে এদেশে প্রাচীনতম আদিবাসী হিসাবে নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি দিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে, সেই জন্য পরিবার প্রতি পাঁচ একর করে জমি বরাদ্ধের জন্য সরকারের কাছে বিভিন্ন ভাবে আবেদন জানিয়েছেএরাও যেন এদেশে শান্তিপূর্ণ এবং স্থায়ীভাবে অন্যান্য আদিবাসীদের মত বসবাসের সুযোগ পায়অশিক্ষিত পশ্চাদপদ হওয়ায় তারা এতদিনে জমিগুলো তাদের নামে রেকর্ড করায়নি বা রেকর্ড করানোর প্রয়োজনীয়তা মনে করেনিতাদের এই অজ্ঞতা ও দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে বিভিন্ন মহলের প্রশাসন দখলীকৃত জায়গা বা ঘরভিটা পর্যন্ত রেকর্ডভূক্ত করে নিয়েছেখিয়াং আদিবাসীরা বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের আশু পদক্ষেপ কামনা করছে

তাছাড়া বাংলাদেশের অনেক মানুষ এই ক্ষুদ্র জাতিসত্তা সম্বন্ধে এখনো অবগত নন যাতে করে বিলুপ্তপ্রায় ভূমিহীন খিয়াংরা জমি বরাদ্ধ পায়পশ্চাদপদ ও ভূমিহীন খিয়াংদের সরকারী পর্যায়ে আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে যেন অর্ন্তভূক্তি করা হয়


এরশাদ শাসনামলে ১৯৮৯ইং সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন (১৯৮৯ এর ১৯নং আইন) খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন (১৯৮৯ এর ২০নং আইন) এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন (১৯৮৯ এর ২১নং আইন) মূলে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ৩টি পৃথক স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করেন প্রত্যেক স্থানীয় পরিষদে স্থানীয় জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান ও ৩০জন অন্যান্য সদস্য দ্বারা পরিষদের যাবতীয় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেই সময় প্রত্যেক জাতিসত্তার মধ্য হতে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়েছিল তারই ফলশ্রতিতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অনগ্রসর খিয়াংদের ও সেখানে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ হয়েছিল রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা হতে বাবু চাইহ্লাপ্রখিয়াং এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা হতে বাবু বাচা খিয়াং সদস্য হিসাবে মনোনীত হন এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মধ্যে স্ব স্ব জাতির মাধ্যমে নিজেদের দাবী আদায়ের একটা পথ উন্মোচিত হয়েছিল বর্তমানে সেই নেতৃত্বের পথও রুদ্ধ হয়ে গেল প্রায় ৫ বছরের মধ্যে সদস্য পদ বিলুপ্তি ঘটে পরবর্তীতে সরকার আন্ত:বর্তীকালীন গরিষ্ঠ উপজাতি নেতৃবৃন্দদের নিয়ে পরিষদের কার্যক্রম এ যাবৎ পরিচালনা করে চলেছেন ক্ষুদ্র আদিবাসী হিসাবে এখানেও খিয়াংদের অবহেলার স্বীকার হতে হচ্ছে এমনিতে সংখ্যালঘু অন্যদিকে নেতৃত্বের অভাব দিন দিন এরা নেতৃত্বের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সশস্ত্র শান্তি বাহিনীর মূল রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতির সঙ্গে ০২/১২/৯৭ইং সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তিনামে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৬/৯/১৯৯৮ তারিখের পাচবিম (সম) আঞ্চলিক পরিষদ ১/৯৮/২ নম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২২ সদস্য বিশিষ্ট অর্ন্তবর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদের ঘোষণা দেয়া হয় এই ঘোষণা অনুযায়ী ২২ সদস্য (চেয়ারম্যান-সহ) নিয়ে গঠিত এই পরিষদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যকে উপজাতিয় ব্যক্তি হতে হবে  এখানেও উল্লেখ্য বিষয় এই যে, লুসাই, বম, পাংখোয়া, খুমি, চাক বা খিয়াং এর জন্য একজন সদস্য পদ দেয়া হয়েছে এখানেও খিয়াংরা নেতৃত্বের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল
সংখ্যালঘু হিসাবে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে কোন নেতৃত্বের সুযোগ না থাকায় খিয়াংরা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে সরজমিনে তদন্তে দেখা গেল, কয়েকটি গ্রাম থেকে কোথায় যে খিয়াংরা চলে গেছে কেউই জানেনা সরকারী চাকরী ক্ষেত্রেও যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাদের পক্ষে সুপারিশের লোক না থাকায় চাকরী থেকে তারা  বঞ্চিত  হচ্ছে উচ্চ শিক্ষার অভাবে তারা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও সুযোগ পাচ্ছে না তারা বৃহত্তর জাতিসত্তার কাছে জিন্মি হয়ে রয়েছে কারণ পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নের কার্যক্রমের অংশীদারীত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য কারণ খিয়াংদের পক্ষে কথাবলার মত লোক নেই, তাই উন্নয়নের সকল কার্যক্রমেও তারা অবহেলিত ও বঞ্চিতএই ক্ষুদ্র জাতিসত্তা এ দেশ থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হবে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এতে কোন সন্দেহ নেই

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন